Audience
All
Last Updated
Read Time
Share
Author
সঞ্চয় করবো নাকি বিনিয়োগ করবো?

কীভাবে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করা যায়, তা একটি মৌলিক প্রশ্ন, আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি বিশেষ গুরুত্বের। অনেকের কাছেই আর্থিক নিরাপত্তা একটা দূরের স্বপ্ন মনে হয়, কারণ জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে আর সঠিক আর্থিক সুযোগ পাওয়াও কঠিন। আগের মতো শুধুমাত্র স্থানীয় ব্যাংকে জমানো সম্পদের সুদ দিয়ে জীবনযাপনের খরচের সাথে তাল মেলানো কঠিন হয়ে পড়ছে। ঠিক এই সমস্যাটার সমাধান করার চেষ্টা করছে nsave, বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগের সুযোগ এনে দিয়ে।
তাহলে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিজের সম্পদ বৃদ্ধির জন্য আপনার কী করা উচিত? আমাদের দেশে মূলত এই সিদ্ধান্তটি সঞ্চয় করা অথবা বিনিয়োগের মাঝে। আসুন, প্রতিটির সুবিধা-অসুবিধাগুলো জেনে নেওয়া যাক।
সঞ্চয়: গতানুগতিক পদ্ধতি
সঞ্চয় করা মানে সাধারণত ব্যাঙ্ক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা জমা রাখা। বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের সেভিংস অ্যাকাউন্ট আছে:
- সাধারণ সেভিংস অ্যাকাউন্ট: সাধারণ সঞ্চয়ের জন্য ভালো, এখান থেকে যখন খুশি টাকা জমা দেওয়া বা তোলা যায়।
- স্টুডেন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট: শিক্ষার্থীদের জন্য, এখানে কম টাকা জমা রাখলেও চলে এবং অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যায়, যেমন ফি মওকুফ।
- সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস অ্যাকাউন্ট: বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য, সাধারণত উচ্চতর সুদ এবং অন্যান্য সুবিধা থাকে।
- স্যালারি সেভিংস অ্যাকাউন্ট: চাকুরীজীবীদের জন্য, যেখানে বেতন সরাসরি জমা হয়। অনেক সময় কোনো ন্যূনতম ব্যালেন্স রাখার দরকার হয় না।
- নারীদের সেভিংস অ্যাকাউন্ট: শুধুমাত্র নারী গ্রাহকদের জন্য, এখানে বিশেষ সুবিধা এবং উচ্চতর সুদ পাওয়া যায়।
- ফিক্সড ডিপোজিট সেভিংস অ্যাকাউন্ট: এটা ফিক্সড ডিপোজিট এবং সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুবিধাগুলি একত্র করে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাকা ফিক্সড রাখলে বেশি সুদ পাওয়া যায়।
সঞ্চয়ের সুবিধা:
সঞ্চয়ের অনেক সুবিধা আছে। প্রথমত, বাংলাদেশ সরকার একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স সিস্টেম (DIS) এর মাধ্যমে আপনার জমা রাখা টাকা সুরক্ষিত রাখে, অর্থাৎ ব্যাঙ্ক দেওলিয়া হলেও আপনার টাকা হারানোর ভয় কম। বাংলাদেশে এটা খুবই দরকারি, কারণ এখানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আর্থিক নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে। এ বিষয়ে আরও তথ্য এখানে পাওয়া যাবে: https://www.bb.org.bd/en/index.php/financialactivity/did
দ্বিতীয়ত, সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে সহজেই টাকা তোলা যায়, যা জরুরি অবস্থার জন্য খুব দরকারি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কথা ভেবে হাতে কিছু চলতি সম্পদ থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।
এছাড়াও, সেভিংস অ্যাকাউন্টকে কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হয়, কারণ বাজারের ওঠা-নামার প্রভাব এখানে পড়ে না, যা অস্থির অর্থনীতির জন্য ভালো।অবশেষে, নিয়মিত সঞ্চয় আর্থিক শৃঙ্খলা শেখায় এবং একটা আর্থিক সুরক্ষা তৈরি করতে সাহায্য করে।
সঞ্চয়ের অসুবিধা:
তবে সঞ্চয়ের কিছু অসুবিধা আছে। সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদের হার সাধারণত খুবই কম হয়, বিশেষ করে বিনিয়োগ থেকে পাওয়া রিটার্নের তুলনায়। বাংলাদেশে যেহেতু মুদ্রাস্ফীতির হার বেশি, এর প্রভাবে আপনার জমানো টাকার আসল দাম কমে যেতে পারে। এখনকার মুদ্রাস্ফীতির হার প্রায় ৯.৩৫%, এর মানে সেভিংস অ্যাকাউন্টে রাখা টাকার ক্রয়ক্ষমতা সময়ের সাথে সাথে কমতে থাকবে।
বিনিয়োগ: বৃদ্ধিমুখী পদ্ধতি
বিনিয়োগ হলো বিভিন্ন আর্থিক মাধ্যম, যেমন শেয়ার, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড বা জমি-বাড়ি, ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থ রাখা, উচ্চতর রিটার্নের প্রত্যাশায়। বাংলাদেশে বিনিয়োগের কিছু উপায় আছে:
- জাতীয় সঞ্চয়পত্র (NSC): খুব জনপ্রিয় এক বিনিয়োগের পদ্ধতি, যেখানে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট রিটার্ন পাওয়া যায়।
- ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপ্ট (FDR): ব্যাঙ্কে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখা, যার উপর নির্দিষ্ট হারে সুদ পাওয়া যায়।
- মিউচুয়াল ফান্ড: অনেক বিনিয়োগকারীর টাকা একসাথে করে শেয়ার বাজারে লাগানো হয়।
- সরকারি ট্রেজারি বন্ড: সরকারের তরফ থেকে ইস্যু করা নিরাপদ বিনিয়োগ।
- প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (FDI): বাংলাদেশের ব্যবসা বা প্রকল্পে সরাসরি বিনিয়োগ।
বিনিয়োগের সুবিধা:
বিনিয়োগ করলে সাধারণত সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে বেশি লাভ করা যায়, যা দ্রুত সম্পদ বাড়াতে সাহায্য করে। বাংলাদেশে যেখানে মুদ্রাস্ফীতির হার বেশি, সেখানে এটা খুবই দরকারি। বিভিন্ন ধরনের সম্পদে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি কমানো যায় এবং বেশি লাভ করার সম্ভাবনা থাকে, যা অস্থির অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, বিনিয়োগ মুদ্রাস্ফীতির হাত থেকে আপনার টাকার আসল দাম রক্ষা করতে পারে। বাংলাদেশে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কথা ভেবে এটা একটা উল্লেখযোগ্য সুবিধা।
বিনিয়োগের অসুবিধা:
তবে বিনিয়োগের ঝুঁকিও আছে, যেমন আপনার মূলধন হারানোর সম্ভাবনা থাকে। বাজারের ওঠানামার প্রভাব বিনিয়োগের উপর পড়তে পারে, যা বাংলাদেশের অস্থির অর্থনীতির জন্য একটা চিন্তার কারণ। বিনিয়োগ করতে হলে আর্থিক বাজার সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হয়, যা নতুনদের জন্য কঠিন হতে পারে, বিশেষ করে বাংলাদেশে যেখানে আর্থিক জ্ঞান অর্জন করা বিরল হতে পারে।
কিছু বিনিয়োগ সহজে বিক্রি করা না যেতে পারে বা তরল নাও হতে পারে, যা জরুরি অবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে এমন দেশে যেখানে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকে।
সবকিছু এক জায়গায় বিনিয়োগ না করে ডাইভার্সিফিকেশন বা বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে বিনিয়োগে ক্ষতির ঝুঁকি কমানো সম্ভব। বিনিয়োগ বৈচিত্র্যকরণ মানে বিভিন্ন ধরনের সম্পদ, শিল্প এবং ভৌগোলিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করা। আপনি কোনো একটি বিনিয়োগ খারাপ করলে তার প্রভাব থেকে আপনার পুরো পোর্টফোলিকে রক্ষা করতে পারেন।
আপনার আর্থিক ভবিষ্যতের চাবিকাঠি
সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের মাঝের পার্থক্য এবং এদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো বোঝা আপনার আর্থিক ভবিষ্যতের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রথম ধাপ। গতানুগতিক সঞ্চয় আর্থিক নিরাপত্তার জন্য জরুরি হলেও, nsave-এর মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিনিয়োগের সুযোগগুলো আপনার দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ তৈরির লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হতে পারে। nsave-এর নতুন বিনিয়োগের ফিচার আপনাকে বিস্তৃত মার্কিন স্টক, ইটিএফ, বন্ড, মানি মার্কেট ফান্ড এবং আরও অনেক কিছুতে (যেমন রূপা ও সোনা) অ্যাক্সেস প্রদান করে। এটি বিশেষভাবে আপনার সম্পদ বৃদ্ধি এবং আর্থিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়তার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতি এবং আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য nsave-এর সাথে ভালোভাবে গবেষণা করুন। nsave-এর মাধ্যমে আপনার দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ তৈরির লক্ষ্য অর্জনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করুন।
ডিস্ক্লেইমার/ দাবিত্যাগ: এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য এবং আর্থিক পরামর্শ নয়। বিনিয়োগে ঝুঁকি জড়িত, যার মধ্যে মূলধন হারানোর সম্ভাবনাও রয়েছে। অতীতের কর্মক্ষমতা ভবিষ্যতের ফলাফলের নির্দেশক নয়। প্রতিটি বিনিয়োগকারীকে তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং যদি অনিশ্চিত হন তবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত আর্থিক উপদেষ্টা বা যোগ্য পেশাদারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।